সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
বরিশালে মানবপাচার মামলায় ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিকসহ দুজনকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের দণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অপর দুই নারী আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। বরিশাল মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঞ্জুরুল হোসেন বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ) বিকেলে এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার কাজীরচর এলাকার আব্দুল জলিল সরদার এবং ঢাকার বনানীর মেসার্স সানলাইট এন্টারপ্রাইজ নামের ট্রাভেল এজেন্সির মালিক আনিছুর রহমান। খালাসপ্রাপ্তরা হলো দণ্ডপ্রাপ্ত জলিল সরদারের স্ত্রী রাশিদা এবং জেসমিন আক্তার। রায় ঘোষণার সময় জলিল উপস্থিত থাকলেও আনিছুর রহমান অনুপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে বরিশালের মুলাদীর কাজীরচর এলাকার আব্দুল জলিল পাশের খালাসীর চর এলাকার আবুল কালাম ওরফে মিজানুর রহমানকে ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে লিবিয়া পাঠানোর কথা বলে সুদান পাঠিয়ে দেয়। সেখানে পৌঁছে বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৬৫ জনকে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পান আবুল কালাম। সেখান থেকে ট্রাকে করে ৭ দিন ও ৭ রাত ভ্রমণ করে অবৈধভাবে তাকেসহ অন্যদের লিবিয়া পাঠানো হয়। তবে লিবিয়ায় ঢুকেই নতুন বিপদে পড়েন তারা। সেখানে যে দালালরা তাদের গ্রহণ করে তারা তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে। প্রাণ বাঁচাতে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয় আবুল কালামের পরিবার। এই টাকা নেন আব্দুল জলিল ও আনিছুর রহমান। পরে তাকে ছেড়ে দেয় পাচারকারীরা। এরপর লিবিয়া শহরে ঢুকতেই তাকে দেশটির পুলিশ গ্রেফতার করে। এর এক পর্যায়ে লিবিয়ায় কর্মরত বরিশালের মুলাদীর আব্দুল বারেক খান তাকে পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত করে দেশে পাঠিয়ে দেয়। ফলে এই দুই পাচারকারী মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তার বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে তো নিয়েছেই, এদের কারণে তাকে অমানবিক নিপীড়ন সইতে হয়েছে। তিনি তার সর্বস্ব খুইয়েছেন এদের জন্য।
দেশে ফিরে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর ৪ জনকে আসামি করে বরিশাল আদালতে মামলা করেন আবুল কালাম। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য মুলাদী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মুলাদী থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন খান ৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ওই রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। বাদী পক্ষে এপিপি কাইয়ুম খান কায়সার এবং আসামি পক্ষে হুমায়ুন কবির মামলা পরিচালনা করেন। এ নিয়ে বরিশাল মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ৩টি মামলার রায় ঘোষণা হলো।